১০ জুন ২০২০ SS Apolo
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীদের জীবন রক্ষাকারী সরকারি ওষুধ চুরির অপরাধে এক পুরুষ নার্সকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত পৌণে ৯টার দিকে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের হাই-অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধসহ সিনিয়র স্টাফ নার্স তপন চন্দ্র দাসকে আটক করেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো: বাচ্চু মিয়া।
তিনি জানান, রাতে তপন চন্দ্রকে ওষুধসহ শাহবাগ থানায় ন্যস্ত করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার ফোকলাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন রোগীদের জীবন রক্ষাকারী সরকারি ওষুধ চুরি করে আসছিলেন। তিনি স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা। তার বিরুদ্ধে ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শংকর পাল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
তপন চন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান বাচ্চু মিয়া।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউটের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্রের অর্ধেকই নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সব কর্মকাণ্ডের সাথে ওই হাসপাতালের নেতারাও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এদিকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা খলিলুর রহমান নামে এক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সাপ্লাই থাকার সত্ত্বেও বাইরে থেকে রোগীর চিকিৎসা জন্য ওষুধ কিনে আনতে বাধ্য করা হয়। মাঝে মাঝে শোনা যায় ওষুধ চুরির সিন্ডিকেটের সদস্যরা সরকারি ওষুধসহ আটক হয়েছে। আর আমাদেরকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে বলে।
তিনি অভিযোগ করেন, শুধু ওষুধই নয়, চুরির কাজে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের আরো অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালের মেডিসিন ষ্টোরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, ঢামেক হাসপাতালে ওষুধসহ সব জিনিসপত্র প্রচুর পরিমাণে সাপ্লাই রয়েছে। সেগুলো সঠিক ভাবে বণ্টন করা হতো তা হলে কোনো কিছুই রোগীদের বাইরে থেকে আনতে হতো না। কিছু অসাধু নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে দিনের পর দিন এ সব অপকর্ম করে যাচ্ছে তারা। তাদেরকে সহযোগিতা করেন তাদেরই নেতারা।
তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রতি ওয়ার্ড ও বিভাগে একজন করে নার্সকে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়। তারাই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা বিভাগর কর্মচারীকে হাত করে ওষুধ ওঠানোর ইনডেনয় খাতায় রোগীদের নাম বেশী বেশী করে লিখে মেডিসিন ষ্টোর থেকে মেডিসিন হাতিয়ে নেয় এবং সেসব মেডিসিন কয়েকজন রোগীকে দিয়ে বাকিগুলো তারা আত্মসাৎ করে। আবার অনেক সময় তারা ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সিলিপ দিয়ে দামী দামী ওষুধ তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করে। এ ভাবেই চলছে হাসপাতালে দুর্নীতি।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল কতৃপক্ষ জোরালো ভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চোর সিন্ডিকেট আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনষ্টিটিউটের বর্হিবিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স তপন কুমার বিশ্বাসকে সরকারী ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। ওষুধগুলোর মধ্যে ছিল তিন ধরনের ইঞ্জেকশন, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনর্চাজ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে ওষুধগুলো চুরি করে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বার্ণ ইনষ্টিটিউটের সামনে থেকে তাকে আটক করে পুলিশ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা’র (এনএসআই) একটি টিম। পরে তাকে ব্যাগ ভর্তি ওষুধসহ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তার কাছ থেকে সরকারি তিন ধরনের ইঞ্জেকশন উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
আটককৃত সিনিয়র স্টাফ নার্স তপনকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনষ্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা.পার্থ শংকর পাল জানান, সে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা তাকে ধরতে পারছিলাম না। এখন সে ওষুধসহ আটক হয়েছে। আমি বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
এ দিকে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধসহ সব জিনিসপত্র আছে। তারপরও রোগীরা সঠিক ভাবে তাদের প্রাপ্য পাচ্ছে না। কারণ আমাদের এই হাসপাতালে চোর সিন্ডিকেট সক্রিয়। আমরা হাসপাতালে সুনাম গড়তে রাত দিন চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের এই অপকর্মে জন্য সবার কছে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা এসে তদবির করতে থাকে। তবে ওষুধ চুরিতে যে নার্স ধরা পড়েছে তা বিরোদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবং তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।