লাতিন আমেরিকার ইকুয়েডরে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কভিড-১৯ রোগে মৃতদের লাশে হাসপাতাল ভরে গেছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাথরুমে লাশ স্তূপ করে রাখতে হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে করোনায় দেশটির এমন বাজে পরিস্থিতি উঠে এসেছে। করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। ভেঙে পড়েছে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ইকুয়েডরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গুয়ায়াস প্রদেশের গায়াকিল শহরের মানুষ। করোনার হটস্পট ওই এলাকার একটি হাসপাতালের বর্ণনা দেন চিকিৎসকেরা।
একজন চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বিছানা পুনরায় ব্যবহার করছেন। এমনকি সেখানে থাকা লাশ জড়িয়ে রাখতে এবং সংরক্ষণেও বাধ্য হচ্ছেন তারা।
করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে অন্য রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিতেও বাধ্য হন তারা। এক নার্স বলেন, মার্চ মাস থেকে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নার্সকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ জন রোগীকে সেবা দিতে হতো। এরপর এত রোগী আসতে শুরু করল যে সেবা দিতে দিতেই তাদের জীবন শেষ। এমন কি করোনায় আক্রান্তদের বেড খালি করতে অনেক রোগীকে অন্য কোথাও যেতে বলা হলো, আবার অনেক রোগীকে বের করে দেওয়া হলো।
ওই আরও নার্স বলেন, পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে মানুষ একা, দুঃখে, ব্যথায় চিৎকার করতে শুরু করল, কেউ মলত্যাগ করল, কেউ অক্সিজেন চেয়ে হট্টগোল শুরু করল। পরিস্থিতি এমন বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছিল। মর্গের অবস্থাও ছিল অবর্ণনীয়। মর্গের কর্মীরা আর লাশ নিতে আগ্রহী নন। তাই অনেক সময় লাশ মুড়িয়ে বাথরুমে স্তূপ করে রাখা হলো। লাশের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেগুলো একসঙ্গে নিতে আসত কর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্সের বুধবার সকাল পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, ইকুয়েডরে কভিড-১৯ রোগে এ পর্যন্ত ২৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে ৮৭১ জন।
তবে দেশটির বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। এর মধ্যে এপ্রিলের মাঝামাঝি গায়াকিলের ঘরবাড়ি, রাস্তা ও হাসপাতাল থেকে ১৪০০ লাশ উদ্ধার করা হয়। যদিও দেশটির সরকার মৃত্যুগুলোকে করোনা সম্পর্কিত বলে স্বীকার করেনি।
এ মাসের শুরুতে অনেক লাশ রাস্তায় ফেলে যেতে দেখা গেছে স্বজনদের। মহামারির কারণে দেশটির জনবহুল শহরটিতে সরকারি সেবায় ধস নামে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বিছানা নেই, সেইসঙ্গে জায়গা নেই মর্গেও। এ ছাড়া গোরস্তান ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে না পারায় অনেকে মৃতদের লাশ রাস্তায় ফেলে দেন।