করোনাকালে নারায়ণগঞ্জের সচ্ছল মধ্যবিত্ত দর্পণ
করোনাকালে দেশের সকল স্তরের মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন এই নগরের শিক্ষিত সাংবাদিক, আইনজীবী, মধ্যবিত্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের জীবন ধারণ এর খন্ডচিত্র তুলে ধরা যুক্তিযুক্ত মনে করছি।
১। একজন শিক্ষিত সাংবাদিক যিনি নিজে চারতলা ভবনের মালিক। বাড়ি ভাড়া থেকে মাসে তার লাখ টাকা রোজগার হয়। নিজের সংসার ছাড়াও মা, ভাই, বোনদের সংসার দেখতে তার লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। ফলে নিজ বাচ্চাদের স্কুল, টুইশন খরচ চালাতেই তাকে বাড়তি আয়ের জন্য সাংবাদিকতা পেশা বেছে নিতে হয়েছিল।
করনাকালে এখন তার ভাড়া আদায় হয়না, পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন আসে না, ফলে মালিকের পক্ষে পত্রিকা বের করাও অসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই বিজ্ঞাপনের অভাবে পত্রিকার মালিকও বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন।
এমতাবস্থায় সামাজিক অবস্থানের কারনে বাড়ি ভাড়া আদায়ের পরিবর্তে উল্টো ভাড়াটিয়াদের বাসার চাল, ডাল পাঠাতে হয় ওই সাংবাদিককে। বাড়িতে জমানো টাকা ইতিমধ্যেই সমাজে নিজ অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যয় হয়ে গেছে। ফলে এই ঈদ-রমজান মাসে খালি হাতে বসে আছেন এই সাংবাদিক।
সহসা করনা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে এই সাংবাদিক কি করে এতগুলো পরিবারের মুখ অন্ন তুলে দিবেন সে চিন্তায় অস্থির আছেন তিনি।
২। এক আইনজীবীর একই অবস্থা। ওকালতির পাশাপাশি কয়েকটি টিনের ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে তার আয় লাখ টাকা। মা আর ছোট ভাই বোনদের নিয়ে তার সংসার। ওই আইনজীবী কোর্ট থেকে আয় করেন ৬০/৭০ হাজার টাকা, আর ভাড়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা। এক মাস যাবত সকল আয়ই বন্ধ রয়েছে। বরং গরিব ভাড়াটিয়াদের দেখতে হচ্ছে আইনজীবীকে তার সামাজিক অবস্থানের কারনে। করনা পরিস্থিতির আশু উন্নতি না হলে ভবিষ্যৎ চিন্তায় শর্ষে ফুল দেখছেন এই আইনজীবী।
৩। শিক্ষিত এক খুদ্র বুটিক ব্যবসায়ি যিনি তার পণ্য নিজেই উৎপাদন করেন এবং অভিজাত শোরুমে তা বিক্রি করেন। শ্রমিক কর্মচারী মিলে মোট ২৫/৩০ জন। তারও মাসে আয় লাখ টাকার উপরে। এক মাস যাবত সবকিছুই বন্ধ রয়েছে কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের কে বসিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে তাকেই। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি এখন প্রতিদিন তারাবাতি দেখছেন চোখে। সার্বিক অবস্থার আশু উন্নয়ন না হলে সবকিছু ফেলে তিনি পালিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন বলে মনস্থির করে রেখেছেন।
৪। এছাড়াও নগরের বহু শিক্ষিত সাংস্কৃতিক কর্মী যারা টুইশানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের অবস্থা আরও সংগিন। তারা কারো কাছে হাত পাততেও পাড়ছেন আবার করনা পরিস্থিতির কারনে পরিচিতজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্না দিতে পারছেন না সঠিক পরামর্শ নেয়ার জন্যে। অনেকের বাসায় যে খাবারটুকু পর্যন্ত নেই এই খবরটাও দিতে পারছেন না মোবাইল ব্যালেন্স না থাকার কারনে। এক করুন অবস্থার মধ্যে চলছে তাদের জীবন, দুর্ভিক্ষের চেয়েও কি কম বলা যাবে একে? সবই আছে এখানে আবার কিছুই নাই।
মোস্তফা করিম
২৭/০৪/২০
আমলা পাড়া, নারায়ণগঞ্জ