মুক্তির কথা নিউজঃ বাঙ্গালি জাতিপশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা কেবলই নিপীড়িত হয়েছে। বাঙালিকে
বঞ্চিত করা হয়েছে প্রতি পদে পদে। ১৯৭০-এ পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সরাসরি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু বাঙালিদের পাকিস্তানের শীর্ষ ক্ষমতায় যেতে দিতে পাঞ্জাবি শাসকরা রাজি ছিল না। আবার ষড়যন্ত্রের শুরু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং ২১ মার্চ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা আসেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেন। আরো আলোচনা হবে এই মর্মে বঙ্গবন্ধুকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু সেই আলোচনা আর হয়নি। হয়েছে কেবল কালক্ষেপন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর বাসভবনে অপেক্ষায়, তখন জেনারেল ইয়াহিয়া ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে রাত ১০টার আগেই করাচীর বিমানে উঠলেন। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আলোচনায় ব্যস্ত রেখে ইয়াহিয়া-ভুট্টো তাদের জেনারেলদের দিয়ে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন।
নানা সূত্র থেকে যতদুর জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১০টার আগে বঙ্গবন্ধু গোপন সূত্রে খবর পান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সামরিক আক্রমণ শুরু করবে। এরপর তিনি টি অ্যান্ড টি/ ই পি আর-এর কাছে এর আগে পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করার নির্দেশ দেন।
ঐতিহাসিক ছয় দফা বার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ৭ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘২৫ মার্চ রাত ১১টায় সমস্ত সহকর্মী, আওয়ামী লীগ নেতাদের হুকুম দিলাম, বের হয়ে যাও। যেখানে পারো, এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। খবরদার স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেও।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।
তাজউদ্দিন আহমদ কলকাতা চলে যান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম। সেখানে গিয়ে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে অচিরেই দেখা করার ব্যাপারে মনস্থির করেন। কিন্তু একজন সরকার-প্রধান হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে তাজউদ্দিনকে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ দেওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল না। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ ভারতীয় পার্লামেন্টে গৃহীত এক প্রস্তাবে পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনসাধারণের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মিসেস গান্ধী নিজে এই প্রস্তাব উথাপন করে বলেন, পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি ভারতীয় জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং তারা সর্বপ্রকারে সাহায্য করার জন্য প্রস্তÍত। ৩ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ তাঁর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগালেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, ২৫-২৬ মার্চেই শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান করে একটি সরকার গঠিত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সবাই এই মন্ত্রীসভায় আছেন এবং তাজউদ্দিন আহমদ নিজে এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলে উল্লেখ করেন।
তাজউদ্দিন আহমদের এই উপস্থিত ও বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। কারণ এতে কাজ হয়েছিল এবং এ বৈঠকের পর পরই বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতা দ্রুতগতিতে প্রসার লাভ করেছিল। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে আইনগত দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি দলিল প্রকাশ করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিত।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সারসংক্ষেপ এরকম:
‘যেহেতু একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর হতে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯জন প্রতিনিধির মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭জনকে নির্বাচিত করেন, এবং যেহেতু সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণকে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তারিখে মিলিত হবার জন্য আহবান করেন, এবং যেহেতু এই আহুত পরিষদ-সভা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়, এবং যেহেতু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে, এবং যেহেতু এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখন্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান এবং…… আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ……নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণ-পরিষদ গঠন করলাম, এবং পারস্পারিক আলোচনা করে, এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করনার্থে, সাবভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করলাম এবং তদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করলাম, এবং এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, এবং রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তাঁর বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ ক্ষমতার অধিকারী হবেন, …… আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে।’
ঐতিহাসিক এই দিনটি এবার করোনার কারনে ছোট পরিসরে পালিত হয়েছে,দিবসটির জন্য বানী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক দিনের শুরুতে তপধ্বনির পর রাষ্ট্রের পক্ষে মজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্হাবক অর্পন করেন।এছারা বিভন্ন মিডিয়ায় দিবসটির তাৎপর্ষ তুলে ধরে