সর্বশেষ বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও কম পরীক্ষা হচ্ছে তারপরেও দেখা যাচ্ছে যে প্রতিদিন বাংলাদেশে ২০ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার ঘোরাফেরা করছে এবং এটা স্থিতিশীল। গত জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত একই হারে সংক্রমণ হচ্ছে এবং সংক্রমণের হারের কোন উলম্ফন দেখা যায়নি।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের হার এখন নিম্নমুখী। নিম্নমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে তাঁরা যেটা বলছেন যে, সংক্রমণের হার স্থিতিশীল থাকা মানে হলো করোনা সংক্রমণ আর বাড়ছে না এবং সামনে কমবে। তবে এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং কিছু অনুশাসন মেনে চলার দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। করোনা মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির কথা বলছেন। তা হলো সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেওয়া। সেটা যদি আমরা এখন থেকেই করতে থাকি তাহলে বাংলাদেশে আগামী কিছুদিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কমতে থাকবে।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আমাদের রিপ্রডাকশন রেট, অর্থাৎ একজনের মাধ্যমে অন্যজনের সংক্রমিত হওয়ার হার কমে যাচ্ছে। অনেকেই হয়তো মৃদু উপসর্গ নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। ফলে তাঁর শরীরে এন্টিবডি সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং তিনি আর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার যে হার তা কমে এসেছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের আরেকটি বৈশিষ্ট্যের দিকে বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য দিচ্ছে, তা হলো মৃত্যুসংখ্যা। বাংলাদেশে জুনের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা জ্যামিতিক হারে বাড়েনি এবং এখন মৃত্যুর সংখ্যা আগের মতো স্থিতিশীল হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, একটি দেশে যখন সংক্রমণের একই হার বজায় থাকে তখন বুঝতে হবে যে সেই দেশের করোনা সংক্রমণ কমার লক্ষন স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে গত ৩ সপ্তাহ ধরে একই হার বজায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যদি একটি দেশে সংক্রমণ বাড়তো তাহলে এই হার বাড়তেই থাকতো।
অর্থাৎ ২০ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ, সেখান থেকে ৩০ ভাগ বা আরো বেশি বাড়তেই থাকতো। কিন্তু একটি স্থানে স্থিতিশীল থাকা মানে আমরা আস্তে আস্তে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, হয়তো জুলাইয়ের শেষ থেকে আমাদের সংক্রমণের হার কমতে থাকবে এবং আগস্ট মাসে এই হার সহনীয় মাত্রায় আসবে এবং সেপ্টেম্বরে যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আমরা করোনা সংক্রমণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় মনে করছে যে, বাংলাদেশে পরীক্ষার বাইরে প্রচুর সংখ্যক লোক থাকায় এবং প্রচুর পরিমাণ মৃদু উপসর্গের মানুষ থাকার কারণে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী পরীক্ষার বাইরে থেকেছে এবং আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে। যার ফলে আমাদের সামাজিক সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আমরা যদি আরো কিছুদিন, অর্থাৎ আগামী ১ মাস যদি এই সামাজিক দুরত্ব, সীমিত আকারে অফিস-আদালত এবং কঠোর আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে করোনা সংক্রমণের যে চূড়া সেখান থেকে নামতে শুরু করবো এবং বাংলাদেশ সেপ্টেম্বর নাগাদ করোনা সংক্রমণের একটি সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে।