৩০ জুন, ২০২০,তালহা জামানঃ
বিগত বছরগুলোতে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমাদের প্রকৃত অর্জন আরও অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দেয়া সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরের প্রত্যেকটি বাজেটে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম তার চাইতে প্রকৃত অর্জন আরও অনেক বেশি ছিল। বিগত ১০ বছরে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ। যা বিশ্বের সবার ওপরে। আমাদের কাছাকাছি ছিল চীন ১৭৭ শতাংশ নিয়ে। আর ভারত ছিল ১১৭ শতাংশে। গত ১১ বছরে আমাদের জিডিপির আকার বেড়েছে তিনগুণ।
তিনি বলেন, বাজেট উপস্থাপনের ৭ দিন পরেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আরেকটি গবেষণা করে। সেখানে তারা দেখিয়েছেন, এ বছর বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের প্রক্ষেপণ হলো ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের কাছাকাছি তাদের প্রক্ষেপণ। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি, ইনশাআল্লাহ, আমরা সক্ষম হবো আমাদের এই বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কভিড-১৯ মোকাবিলায় অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেট প্রণয়নের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে শিকড়ের সন্ধানে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের শিকড় হলো আমাদের কৃষি। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি। এজন্য কৃষিখাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেখান থেকে এখনো আমাদের শতকরা ৪০ ভাগের মতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই কৃষিখাতই হতে পারে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক মৌলিক এলাকা।
তিনি বলেন, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলের অনেকের খাদ্য জোগান দিতে পারব, ইনশাল্লাহ। কঠোর পরিশ্রমের আত্মপ্রত্যয়ী কৃষক ভাইদের কারণে অতিসম্প্রতি আমরা ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে চাল উৎপাদনে আমাদের অবস্থান করে নিয়েছি। গত ৫০ বছরে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ। যা বিশ্বে একটি রেকর্ড।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কভিডের কারণে যারা কাজ হারিয়েছে-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী, জেলে, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যানচালক, রিকশাচালকসহ সকল পেশার মানুষ। পান দোকান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র কুটির এবং ছোটবড় সকল ব্যবসায়ী, সকল শ্রেণির, নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ যারা কষ্টে আছেন তাদের সকলের জন্যই এবারের বাজেট। এদেশের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এ বাজেট থেকে বাদ দিতে পারিনি। কাউকে বাদ দিতে পারলে বাজেটের আকার অবশ্যই ছোট রাখা যেত, ছোট রাখা যেত বাজেট ঘাটতিও।
তিনি বলেন, সত্য যে বড় কঠিন। তাই সব জেনে শুনে আমরা কঠিনকে ভালোবেসেছি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এবারের বাজেটটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কারণ এটি আকারে অনেক বড়। কিন্তু আমরা এই বাজেটটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের এই দেশটি একটি বৈচিত্রময় দেশ। এখনো আমরা আমাদের অর্থনৈতিক এলাকার যে চালিকাশক্তিগুলো আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে কোনোটাই এক্সপান্ড করতে পারি নাই। আমরা কৃষির কথা বলেছি, শিল্পের কথা বলেছি, আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতিক লভ্যাংশ) বলেছি। কিন্তু কোনোটাই আমরা পূর্ণমাত্রায় অর্জন করতে পারি নাই।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বারবার একটিমাত্র কথা উঠে আসে যে, আমাদের রেভিনিউ টু জিডিপির অনুপাত একদম কম, অনেক কম ১০ ভাগেরও নিচে। আমাদের মতো দেশ কারোরই ১৮ পার্সেন্টের নিচে না। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই ১০ ভাগ থেকে যদি ১৪ ভাগে উঠতে পারি, মাত্র চারভাগ, তাহলে আমাদের বছরে আমরা অর্জন করতে পারি আরও এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আরও বেশি করতে পারলে তো আরও বেশি সম্ভাবনা আছে। এজন্য কী কাজ দরকার? একটিমাত্র কাজ-সেটি হচ্ছে অটোমেশন।
তিনি বলেন, আমরা গতবছর (অটোমেশন) শুরু করেছিলাম, শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষ করতে পারি নাই। এই করোনার জন্য শেষ হয় নাই। আমরা বিশ্বাস করি, যতদ্রুত সম্ভব এই বছর এটা আমরা বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ। এটা করে আমরা প্রমাণ করব, এত বড় বাজেটও বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।