মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ SS Apolo
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক সারাদেশকে রেড (লাল), ইয়োলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) এই তিন জোনে (অঞ্চল) ভাগ করে লকডাউন করা হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। লাল অঞ্চলে সাধারণ ছুটি থাকবে ১৬ থেকে ৩০ জুন। এসব অঞ্চলে বসবাসকারী সরকারি কর্মকর্তাও এই ছুটির আওতায় পড়বেন।
হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সবকিছু। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় এ কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় লাল ও হলুদ অঞ্চলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে সন্ধ্যায় এই পরিবর্তিত আদেশ আসে।
পরিবর্তিত এ আদেশে বলা হয়, লাল অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও অসামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দফতরগুলো এবং এলাকাগুলোতে বসবাসকারী ওই দফতরগুলোর কর্মকর্তাও সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে অবস্থিত অফিসগুলো ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেভাবেই চলবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকার সময় অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহনও চলাচল করতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধ অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়াদি সমন্বয় করবে।
আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ (মূলত স্বাস্থ্য বিভাগ) লাল, হলুদ ও সবুজ অঞ্চল ভাগ করে জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে।
এদিকে ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বর্তমান সময়ের মতো (৩১ থেকে ১৫ জুনের নিয়মকানুন) নিষেধাজ্ঞাগুলো থাকবে। এখনকার মতো ৩০ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে। অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাও চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেবে।
সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজন করতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিংমল এখনকার মতোই ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোও এখনকারমতো নিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে পারবে।
রেড জোন লকডাউনের প্রস্তুতিতে দুই সিটি করপোরেশন: সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই লাল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত রাজধানীর ৪৫টি এলাকায় লকডাউন শুরু করতে পারবে সিটি করপোরেশন। এজন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, যত তাড়াতাড়ি ম্যাপিং করে দেওয়া যায়, তত তাড়াতাড়ি ডিএনসিসি লকডাউনে যেতে পারবে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে একটি বৈঠক আহ্বান করেছেন। বৈঠক থেকে লকডাউন বাস্তবায়ন করার কৌশল বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সমকালকে জানান, তিনি গণমাধ্যম থেকে লাল অঞ্চলের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তবে লকডাউন শুরুর ব্যাপারে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি।
লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, জোনভিত্তিক লকডাউনের বিষয়ে তিনিও কোনো নির্দেশনা পাননি। কল্যাণপুর এলাকার কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান সমকালকে জানান, লকডাউন সংক্রান্ত নির্দেশনা পাননি।
পূর্ব রাজাবাজারে ত্রাণপ্রত্যাশী বাড়ছে: গত মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে প্রথম অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনে থাকা পূর্ব রাজাবাজারে ত্রাণ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। সোনারতরী টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় বাস করা এক গৃহকর্মী জানান, করোনার কারণে অনেক দিন থেকেই তার কাজ নেই। স্বামীরও কাজ না থাকার অবস্থা। এখন ত্রাণ না দিলে তো বাঁচতে পারবেন না।
স্থানীয় কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জানান, প্রথম দিন ২২ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়। পরদিন ৪০ জন। এভাবে প্রতিদিনই বেড়েছে। সোমবার প্রায় ২০০ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। যারাই ফোন দিচ্ছে তাদের বাসায় স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবী রাকিবুল ইসলাম জানান, মানবিক সহায়তার জন্য ফোন নম্বর দেওয়া আছে। প্রতিদিনই এসব নম্বরে বা কন্ট্রোলরুমে ত্রাণ চেয়ে মানুষের ফোনের সংখ্যা বাড়ছে। স্বেচ্ছাসেবীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।
পূর্ব রাজাবাজারের এক বাসিন্দা জানান, লকডাউন সফল করতে তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। লকডাউন শুরুর আগেই প্রয়োজনীয় সব পণ্য কিনে রেখেছেন। এরপরও দুয়েকটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য শেষ হয়ে গেলে কন্ট্রোলরুমে ফোন দেন তিনি।
সোমবার পূর্ব রাজাবাজারের ভেতরের অলিগলি অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব ছিল। অবশ্য প্রবেশপথে কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনেও যেন অজুহাতের শেষ ছিল না মানুষের। অনেকেই যেন হাফিয়ে উঠেছেন লকডাউনে থাকতে। তারা নানা অজুহাত খুঁজছেন বের হওয়ার জন্য।