প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের নেপথ্য নায়ক ও নিঃশব্দে ঘটে যাওয়া আইসিটি বিপ্লবের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে তার সরকারি বাসভবনে ‘সজীব ওয়াজেদ জয় : সমৃদ্ধ আগামীর প্রতিচ্ছবি’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বছরে জন্মেছেন বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দৌহিত্রের নাম রেখেছিলেন জয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা তিনি। তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল। এ খাতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তার প্রস্তাবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সে সময় বিরোধী পক্ষ ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে নানা কটাক্ষ, সমালোচনা করলেও আজ তথ্য ও প্রযুক্তিগত সুবিধা মানুষের হাতের মুঠোয়। দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারণেই।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয়ের কর্মে আজকের বাংলাদেশ যেন সর্বত্র জয়ময়। মহাকাশে জয়, তথ্য ও প্রযুক্তিতে জয়। অনলাইনে ঘরে বসে বিল প্রদান থেকে শুরু করে বড় বড় টেন্ডার কিংবা সরকারি অনেক কর্মকান্ড এখন ডিজিটাল করা হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে, যা সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশে এখন ডিজিটালাইজেশনের বিপ্লব চলছে। আর এই মহাযজ্ঞের মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের। সার্বিকভাবে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে তার অবদান অনস্বীকার্য। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ, ফোর-জি চালু, ইন্টারনেটের দাম কমানো, কম্পিউটারের শুল্কমুক্ত আমদানি, ফ্রিল্যান্সিংয়ে উৎকর্ষ সাধন, বিভিন্ন দাফতরিক কাজ অনলাইনে করাসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে জয় উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছেন। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে তথ্য প্রাপ্তি এখন অনেক সহজ হয়েছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সরকার এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এই করোনাকালে যেসব দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) এগিয়ে তারা বাড়তি সুফল পাচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছরে গড়ে ওঠা তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোই এ কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে লাগছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জরুরি সেবাসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন জয়। পরে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে যান তিনি। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের একটি মেয়ে আছে। লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে। ২০০৭ সালে জয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি নিয়ে আসেন তিনি। পর্দার অন্তরালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে দলীয় ঘরানা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জয়। বিশেষ করে দেশের তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে জয়ের ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। এ ছাড়া তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করতে বৃহত্তম প্ল্যাটফরম ‘ইয়াং বাংলার’ সূচনা করেন। ইতিমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে।