বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল চারটা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান প্রফেসর দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে কিছু দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ই মে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে থাকাবস্থাতেই সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট এই ব্যক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শেষ করেন। পরে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা দেয়।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কর্ম রয়েছে। গবেষণা ও সাহিত্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন জীবদ্দশায়। তার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা শোক প্রকাশ করেছেন।
একনজরে ড. আনিসুজ্জামান: বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ও লেখক ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এ টি এম মোয়াজ্জেম। তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন গৃহিণী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষা জীবনের শুরু করেন আনিসুজ্জামান। পরে এদেশে চলে আসার পর অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন খুলনা জেলা স্কুলে। কিন্তু বেশিদিন এখানে পড়া হয়নি। একবছর পরই পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় ভর্তি হন প্রিয়নাথ হাইস্কুলে। জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করে বাংলায় অনার্স নিয়ে বিএ-তে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণার পাশাপাশি তিনি শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেন আনিসুজ্জামান। সাফল্য কিংবা খ্যাতি তাঁকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি সাধারণ জীবন থেকে, বিচ্যুত করতে পারেনি আদর্শ থেকে। মানুষের দুঃখের সঙ্গী, আনন্দেরও সঙ্গী তিনি। দেশ ও জাতির সংকটে, সম্ভাবনায়ও এগিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনষ্টিটিউট অব এশিয়ান ষ্টাডিজ কলকাতা, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নথ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এছাড়া তিনি নজরুল ইনষ্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগরে তিনি তাজউদ্দীনের বিচক্ষণ কর্মকাণ্ড সরজমিনে কাছ থেকে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মহান ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে- মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র, মুনীর চৌধুরী, স্বরূপের সন্ধানে, আমার একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, আমার চোখে, সাহিত্যে ও সমাজে, পূর্বগামী, কাল নিরবধি প্রভৃতি। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার।