০২ জুলাই ২০২০, তালহা জামানঃ
তৃতীয় দফার কর্পস কমান্ডার স্তরের বৈঠকেও সমাধানে আসতে পারেনি ভারত ও চীন। সীমান্তে সংঘর্ষের পর একের পর এক আলোচনা বেশ নজরকাড়া হলেও তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি।
বরং উত্তেজনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। শেষ হয় রাত ১১টার পর।
এ বৈঠকের পরেও সমাধান সূত্র অধরা। গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেকে সেনা সমাবেশ সরাতে রাজি নয় চীন। উল্টো আরও বাড়াচ্ছে।
বেইজিংয়ের যে কোনো পদক্ষেপের জবাব দিতে স্থল ও আকাশপথে প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে ভারতও। জলপথেও শক্তি বাড়াচ্ছে দেশটি।
প্যাংগং লেকে যাচ্ছে নৌবাহিনীর ১২টি নজরদারি জাহাজ। এছাড়া প্রশিক্ষিত বিশেষ কমান্ডো বাহিনীও পাঠাচ্ছে ভারত।
ভারত ও চীন সেনার কোর কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকের নির্যাস বলতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা। সেনা সমাবেশ সরানো নিয়ে কথাবার্তা। কিন্তু এর বাইরে গালওয়ান উপত্যকা বা প্যাংগং লেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে চীন সেনা সরাবে, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস মেলেনি বলেই ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর।
বরং বিভিন্ন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা, রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র মজুদ বাড়িয়েই চলেছে বেইজিং। তৈরি করছে সেনা ছাউনির মতো নানা কাঠামোও।
এ পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সেনা সরিয়ে স্থিতাবস্থা ফেরানো এবং বেইজিংয়ের তরফে কোনো রকম আগ্রাসন হলে তার উপযুক্ত জবাব দিতে নিজেদের প্রস্তুত রাখার কৌশলেই এগোচ্ছে নয়াদিল্লি।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই ফিংগার ৪-এর ভেতরে স্থায়ীভাবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চীন। ভারতকে চাপে রাখতে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বেইজিং।
প্যাংগং লেক এবং গালওয়ান উপত্যকা সমস্যা সমাধানে ভারত বা চীন কেউই সেনা সরাতে রাজি হয়নি। ভারত বলছে, প্যাংগং লেকে তিন কিলোমিটার পিছু হটা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ তাহলে ফিংগার-৪ থেকে সরে আসতে হবে।
ফিংগার-৪ সবসময় ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভারত ফিংগার ৮-এ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল দাবি করে।
ভারতের ওপর নজরদারি বাড়াতে বর্তমানে সেখানে ঘাঁটি তৈরি করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। সেখানেই বাঙ্কার এবং নজরদারি ব্যবস্থা করে পোস্ট তৈরি করেছে চীন।
ফিংগার-৪ থেকে ফিংগার ৮-এর মাঝে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে মূলত এ কাজ টানা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। একইভাবে, গালওয়ান পেট্রল পয়েন্ট ১৪-তে দুই থেকে তিন কিলোমিটার পিছু হটতে রাজি নয় চীন।
প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর অনুযায়ী, ডেপসাং এবং ডেমচকেও একইরকম অবস্থান চীনের। দেশটি লাদাখ সীমান্তের কাছে সেনা বাড়িয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে ও আজতাক টিভি জানায়, চীন প্রায় ২০ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে।
এছাড়া জিনজিয়াং প্রদেশে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন রেখেছে, যাদের ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছাতে ৪৮ ঘণ্টা লাগবে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে সব বিতর্কিত অঞ্চলগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। চীন আলোচনা শেষে জানিয়েছে, গত ২২ জুন গালওয়ানের ‘ক্লেমড লাইন’ থেকে ৮০০ মিটার দূরে ছিল তারা। গালওয়ান উপত্যকার পিপি ১৪-তে চীনা সেনারা প্রায় ১০০-১৫০ মিটার সরে গেছে।
লাইন অফ কন্ট্রোলে পিপি-১৪ থেকে শেষ পর্যন্ত সব পেট্রল পয়েন্ট নিজেদের বলে দাবি জানিয়েছে ভারত। প্যাংগং লেকে টহলদারির জন্য চীন সেনার রয়েছে ৯২৮বি ভেসেল। এর সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিতে চাইছে ভারত। দেশটির সেনা সূত্রে জানা গেছে, তিন বাহিনী যৌথভাবে ভেসেল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে সি-৭ হেভি লিফ্টার বোয়িং বিমানের মাধ্যমে ভেসেলগুলো লেহ-তে নিয়ে যাওয়া হবে।
তবে আকাশপথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে দ্রুত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। অন্য কোনোভাবে বোটগুলো পাঠানো যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন সেনা কর্মকর্তারা।
ভারত উঁচু পাহাড়ে ঘেরা দুর্গম সংঘাতের ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত পৌঁছাতে মোতায়েন করেছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ও কমান্ডোকে। কাশ্মীর থেকে লাদাখে পাঠানো হয়েছে দুটি প্যারা কমান্ডো ইউনিটকে।