প্রায় সাড়ে তিন ফুট স্কয়ারের কক্ষে চারটি বোর্ড। প্রত্যেকটি বোর্ডের ওপর একটি করে বাল্ব জ্বলছে। একেকটি বোর্ডে চারজন। রুমে হাঁটার পথ নেই বললেই চলে। বরিক পাউডারের আধিক্যে বসা দায়। খেলা হচ্ছে জাতীয় ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপের। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের কক্ষ খুবই ছোট বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জজয়ী দলটির জন্য। তারপরও তৃণমূলে প্রতিভা অন্বেষণ করছেন কর্তারা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্যারমের সাফল্য কম নয়। ১৯৯৯ সালে মালদ্বীপে নাদি নাইট ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৫ সালে ভারতের কলকাতায় পদ্মা-গঙ্গা সম্প্রীতির ক্যারম টেস্ট ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ভারতে ১৪ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ক্যারম প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জেতে। পরের বছর পুরুষ দলগতে ব্রোঞ্জ। এছাড়া দ্বৈতে হেমায়েত ও হাফিজ চতুর্থ হন। হেমায়েত হোসেন এবং হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ ক্যারমের বড় বিজ্ঞাপন। বিশ্ব ক্যারম র্যাংকিংয়ে হেমায়েত মোল্লার অবস্থান সাতে। বিশ্বকাপ কিংবা আন্তর্জাতিক ক্যারম ফেডারেশন (আইসিএফ) কাপেও নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এই খেলা এক সময় অবহেলিত ছিল। আগে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের টুর্নামেন্ট করেই দায়িত্ব শেষ করতেন কর্মকর্তারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পর বেশ কিছু টুর্নামেন্ট হাতে নিয়েছেন। ক্যারম প্রতিযোগিতায় নতুনত্ব এনেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আহমেদ লিওন। তার কথায়, ‘সভাপতির সহযোগিতায় আমরা টি ২০ ক্রিকেটের মতো চার ব্রেকের ক্যারম খেলার পত্তন করেছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে আগেই এর প্রচলন ছিল। ক্যারম খেলার উপযোগী করে তুলতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ করা হয়েছে।’
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টও সাড়া জাগিয়েছে দেশজুড়ে। এ টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসেছেন বুয়েটের স্নিগ্ধা, রবিনরা। গত বিজয় দিবসে দেশসেরা ক্যারম খেলোয়াড় হেমায়েতকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন রবিন। গত বছর মুম্বাই থেকে ২৩টি ক্যারম বোর্ড আনা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত মোবাইল সেট কোম্পানি হুয়াউই বোর্ড দিয়ে সহায়তা করেছে। এশিয়ান ক্যারম ফেডারেশনের সহ-সভাপতি লিওনের কথা, ‘হুয়াউই বিদেশ সফরেও আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।’ এবার তৃণমূলে যেতে চায় ক্যারম ফেডারেশন। লিওন বলেন, ‘আমরা এবার তৃণমূলে মনোযোগ দিতে চাই। আপাতত ঢাকার বেশ ক’টি স্কুলে ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করব। যাতে ভবিষ্যতের তারকা খেলোয়াড় বেরিয়ে আসতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আপাতত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের স্কুলগুলোতে প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম শুরু করছি। জাতীয় ক্যারমের পাইপলাইন তৈরি করতে মিরপুর পল্লবী ডিগ্রি কলেজে ২৭ জানুয়ারি শুরু করছি টুর্নামেন্ট। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে আমাদের তৃণমূল প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম। আমরা সনদপত্র ও প্রাইজ দেব।’ আইসিএফের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ লিওন বলেন, ‘২০১৩ সালে শেষবার সার্ক ক্যারম চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেও খেলেছি আমরা। এরপর আর টুর্নামেন্টটা হয়নি। গত বছর বিশ্বকাপে খেলতে কোরিয়া যেতে পারিনি ভিসা না হওয়ায়। তাই এবার আমরা নিজেরাই আইসিএফ টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ভাবছি। সব ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরে টুর্নামেন্ট শুরু করব।