২২ জুন ২০২০ sayem siraj
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নিজ আসনের জন্য জাতীয় সংসদ সদস্যরা বরাদ্দ পাচ্ছেন ২০ কোটি টাকা করে। প্রতি বছর ৫ কোটি টাকা ধরে ৪ বছরে এ বরাদ্দ পাবেন তারা।
এজন্য ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটিসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা।
পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২৮০ জন এমপি এ টাকা পেলেও যারা সিটি কর্পোরেশনের আসনে আছেন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রয়েছেন তারা এ বরাদ্দ পাবেন না। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেল কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তায়ন হয়েছে ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ওই সময় ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এ বছর কম অগ্রগতি হওয়ার কারণ সবারই জানা।
কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কম হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, শেষদিকে বিল পরিশোধের কারণে বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী মূলত দুই কারণে এমপিদের জন্য ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো প্রকল্প-৩’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। কারণগুলো হল, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। শহরের সুবিধা গ্রামে নিয়ে যেতে কাজ করছেন তিনি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
এছাড়া এমপিরা গ্রামে যখন হাঁটেন, সাধারণ জনগণ ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, রাস্তা ইত্যাদির উন্নয়ন দাবি করেন। এসময় এমপিরাও প্রতিশ্রুতি দেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তবে প্রকল্পটির মানসম্মত বাস্তবায়নে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় রাস্তা, ব্রিজ কালভার্ট, হাটবাজার ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন আগামী ৪ বছরে ২৮০ জন এমপি বরাদ্দ পাবেন ২০ কোটি টাকা করে। ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ নামক প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক বছর ৫ কোটি টাকার পছন্দমতো প্রকল্প দিতে পারবেন এমপিরা। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের সঙ্গে নিকটবর্তী গ্রোথ সেন্টার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা ও জেলার যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। ফলে পল্লী অঞ্চলে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ হবে। তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার।
এছাড়া ৩৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৭ হাজার ৯৯২ মিটার গ্রামীণ সড়কে (১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে) সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এমপিদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এটি চলমান রয়েছে।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল, বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৯১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (দ্বিতীয় সংশোধিত), যার ব্যয় ৪০৯ কোটি টাকা। মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলা সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা, যার ব্যয় ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন, যার ব্যয় ৫৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। জামালপুর জেলা কারাগার নির্মাণ, যার ব্যয় ২১০ কোটি টাকা।
গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন, প্রথম সংশোধিত) যার ব্যয় ৬৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ (হরিদাসপুর)-মোল্লাহাট (ঘোনাপারা) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, যার ব্যয় ৬১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০ মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (দ্বিতীয় পর্যায়), যার ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং বিএএফও বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, যশোর প্রকল্প, এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা।