বেশ কয়েক দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানলেন বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। শনিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের রাজনীতিক পরিমণ্ডলে এই উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মৃত্যুকালে নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ ও তিন সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
নাসিমের মৃত্যুতে চলমান করোনাভাইরাস সংকটকালের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিক পরিমণ্ডল যেন আরও ভারী হয়ে উঠেছে। নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় শনিবার দুপুরে এ কথা জানান।
তারা বলেন, আগামীকাল (রোববার) সাড়ে ১০টায় বনানী জামে মসজিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকটি বিবেচনায় রেখে মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ সিরাজগঞ্জে নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না বলেও তারা জানান।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী তার পিতা।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিমের পড়াশোনা জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে মনসুর আলীকেও হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন নাসিম। তখন তাকে কারা বরণও করতে হয়েছিল।
১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম।
তখন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্বও পান তিনি। তখন ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নাসিম পঞ্চমবারের মত সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন নাসিম।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।
নাসিমের সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাহিদ মালেক এই সরকারে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।
বর্তমান মন্ত্রীসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নাসিম। পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।