২৮ জুন ২০২০,sayem saraj
ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর দুই-তিন লাখ মেট্রিক টন আম রফতানি করা সম্ভব। আর এটা করা গেলে বছরে ২০০-৩০০ কোটি টাকা আয় হবে। তবে আম রফতানি করতে হলে উন্নত প্রসেসিং তথা ভেপর হিট ট্রিটমেন্ট (ভিএইচটি) প্ল্যান্ট প্রয়োজন। ভিএইচটি প্ল্যান্ট স্থাপন হলে আম চাষিরা যেমন ব্যাপক উপকৃত হবেন, তেমনি আম রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন আম চাষ হয়ে থাকে। সবেচেয়ে বেশি আম চাষ হয় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুর অঞ্চলে। এরপর সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেও ব্যাপক আম চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। বেশ কয়েক বছর হলো ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আম রফতানি হচ্ছে। তবে তা খুবই কম। করোনার কারণে এ বছর রাজশাহী ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের আম বিদেশে রফতানি হচ্ছে না। তবে পার্বত্য রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার আম ইতালি ও যুক্তরাজ্যে রফতানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই এলাকার দুই হাজার ৬০০ কেজি ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আম ইতালিতে এবং ৪০০ কেজি আম যুক্তরাজ্যে রফতানি করা হয়েছে। আরো ৮ হাজার ৫০০ কেজি আম রফতানির আদেশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন, ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের’ পরিচালক মো: মেহেদী মাসুদ। তিনি বলেন, এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনার এই সঙ্কটের মধ্যেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ইতোমধ্যে নানিয়ারচরের আম ইতালি ও যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়েছে। চীনেও আম রফতানির প্রচেষ্টা রয়েছে।
গতকাল শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের’ সহযোগিতায় এ উপজেলায় ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি, মল্লিকাসহ অন্যান্য জাতের আমের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগেও এলাকার চাষিরা আমে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব, কম ফলন এবং পরিচর্যার অভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় আম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের’ পরিচালক জানান, এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় হর্টিকালচার সেন্টারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট আম চাষিদের বাগানের নিবিড় পরিচর্যা, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। এতে এ এলাকার আম বাগানের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এবং রফতানিযাগ্য আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে যে পরিমাণ আম উৎপাদন হয় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ আম রফতানি করে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আম রফতানি করা গেলে চাষিরাও ব্যাপক লাভবান হবেন এবং আম চাষে উৎসাহিত হবেন। কিন্তু আম রফতানি করতে গেলে যে প্রসেসিং মেশিন বা প্ল্যান্ট প্রয়োজন তা নেই দেশে। আম যেহেতু পচনশীল ফল, তাই আম মওসুমে নষ্ট হওয়ার ভয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হয় চাষিদের। অনেক ক্ষেত্রে পচে নষ্টও হয়ে যায়।
মেহেদী মাসুদ নয়া দিগন্তকে জানান, বছরে দুই-তিন লাখ টন আম রফতানির সুযোগ রয়েছে। তবে উন্নত দেশে আম পাঠাতে হলে ভেপর হিট ট্রিটমেন্ট (ভিএইচটি) সিস্টেমে প্রসেসিং করে পাঠাতে হয়, যা দেশে নেই।
তিনি এই প্রতিবেদককে গতকাল বিকেলে বলেন, বিদেশে বর্তমানে যে আম যাচ্ছে তা লোকাল মার্কেটে যাচ্ছে। কিন্তু চেইন শপে আম দিতে গেলে ভিএইচটি ছাড়া নেবে না। যেহেতু এই আম অনেক দিন রাখতে হবে, আর আমের মাধ্যমে যাতে কোনো জীবাণু, ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাস না যায় সেটা নিশ্চিত হতে ভেপর হিট ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় আম পাঠাতে হবে। নইলে তারা নেবে না। তিনি আরো বলেন, ফল যেহেতু সেদ্ধ করে খেতে হয় না তাই পুষ্টিটা শরীরে সবটুকু ঢোকে। সবজির পুষ্টি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়, যেহেতু গরম করতে হয়। সেক্ষেত্রে আম সব দেশেই জনপ্রিয় ও চাহিদা বেশি। আমরা যদি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির আম নিশ্চিত করতে পারি, স্পটলেস আম রফতানি করতে পারি তাহলে দামও ভালো পাব। তা ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে রফতানি করা সম্ভব। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরাও চাচ্ছেন ভিএইচটি স্থাপন।
এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, আম রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। আম প্রসেসিং করে পাঠানোর জন্য ভিএইচটি প্ল্যান্ট স্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ বছর তো গেলই, আশা করা হচ্ছে আগামীতে রাজশাহী অঞ্চলে দুইটি, চট্টগ্রামে একটি এবং ঢাকায় একটি ভিএইচটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা সম্ভব হবে।